আমার ছুটি কবে শেষ হবে?
বাংলাভিশনে হেড অফ নিউজ হিসাবে গত ১২ বছর থেকে বহাল আছি। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ করে বিশেষ চাপের কথা বলে আমাকে দুই মাসের ছুটি দেয়া হয়। তখন বলা হলো, তাদের ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। কিন্তু কিসের চাপ, কেন চাপ, কার সাথে কথা বলবো, কি বিষয়ে কথা বলবো এমন বিভ্রান্তির ভিতরে আমাকে ছুটিতে যেতে এক প্রকার বাধ্য করা হলো। ছুটিতে থাকলে আমার বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বহাল থাকার কথা। কিন্তু তারা সবই বন্ধ করে দিলো। এই বিষয়ে আমি চেয়ারম্যান আব্দুল হক, এমডি আনোয়ারুজ্জামান এবং ডিএমডি ইশরাক হোসেনের সাথে কথা বলেছি। তারা প্রথমে আমাকে আশ্বস্ত করলেও পরে আমার সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তখন বুঝলাম আমার সাথে প্রতারণামূলক কৌশলে তারা এগুচ্ছেন। বিশেষ চাপের কথা বলে তারা সরকারের ওপর দায় চাপাতে চাচ্ছেন।
এই বিষয়ে আরো পরিস্কার হলাম, যখন দেখলাম ছুটিতে যাবার মাত্র তিন সপ্তার মাথায় আমার পদে দিগন্ত টিভি ও ইনকিলাব পত্রিকার সাবেক সাংবাদিক আব্দুল হাই সিদ্দিকীকে নিয়োগ দেয়া হলো। একই পদে দুইজন কিভাবে থাকে? এটা কোন আইন? এটা কি স্বেচ্ছাচারিতা না?
শুধু তাই না, এর কিছুদিন পর আমার অফিস রুমের জিনিসপত্র তছনছ করে সেখানে তাকে বসানো হলো। আমি ছুটিতে যাবার সাথে সাথেই অফিস থেকে বরাদ্দ হওয়া গাড়িটিও আব্দুল হাই সিদ্দিকীর দখলে চলে যায়। তাহলে কিসের বিশেষ চাপ? কার চাপ? তারা কি এগুলো বলে দিয়েছিলো?
আমার ছুটি শেষ হবার পর আমি কাজে যোগ দেবো এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মার্চ মাস শেষ হবার পর থেকে এখনো পর্যন্ত আমি আমার কর্মস্থলে যেতে পরছি না। আমার বেতনও বন্ধ রয়েছে। করোনা মহামারীর সময় যখন আমি ঘরবন্দী তখন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে টেলিফোনে। বলা হয়েছে, চিঠি আছে। কিন্তু কি সেটা আজও জানতে পারিনি। কেননা, আমি তখন সেটা গ্রহণ করতে পারি নাই।
আমি দায়িত্বে থাকতে বার বার আমাকে কর্মী ছাঁটাই করার জন্য তালিকা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমি তাতে রাজী হয়নি। এই জন্য তারা আমার উপরে খুবই অসন্তুুষ্ঠ ছিলেন। আমার মতামত উপেক্ষা করে তখনও কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আর আমার অনুপস্থিতিতে এটা এখন আরো বেগবান হয়েছে। আমার পদে অবৈধভাবে নিযুক্ত আব্দুল হাই সিদ্দিকী দূর্বল চিত্তের লোক হওয়ায় তার সহায়তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ আরো অনেককে চাকরিচ্যুত করেছেন। তিনি প্রতিবাদতো দূরের কথা বরং নীরবে ও গোপনে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এমন অবস্থায় সেখানে মিডিয়া কর্মীদের চাকরি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্ক বাড়ছে। চাকরি বাঁচাতে অনেককে তোষামোদীর আশ্রয় নিতে হচ্ছে। ভাই বলার পরিবর্তে ‘স্যার’ সংস্কৃতির প্রচলন হয়েছে। ফলে, পেশাদারিত্ব বিলুপ্ত হতে চলেছে।
এমন পরিস্থিতিতে আমাকে ও আমার সহকর্মীদের রক্ষার জন্য আমি সব মহলের সহযোগিতা কামনা করছি। আশা করবো সরকার, বিরোধী দল, সব সাংবাদিক সংগঠন বাংলাভিশনে বিদ্যমান নিবর্তনমূলক কর্মকান্ড প্রতিহত করতে এগিয়ে আসবে। প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক ও কর্মীদের পাশে থেকে তাদের রুটি রুজির অধিকার রক্ষায় আপনাদের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করি। একই সাথে আমি খুব তাড়াতাড়ি যাতে কর্মস্থলে ফিরে আমার সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে পারি সে বিষয়ে সহযোগিতা কামনা করছি।
***বাংলাভিশনের হেড অব নিউজ মোস্তফা ফিরোজের টাইমলাইন থেকে