ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার বা বিজেসি নামে একটি সংগঠন আছে। বছর দেড়েক আগে, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্টদের এই সংগঠন সমবায় ভিত্তিতে জমি কিনে ফ্ল্যাট বানানোর একটা মহা পরিকল্পনা নেয়। সাংবাদিকরা বিজেসির এই ফাঁদে পা দেয়। দুই দফায় ৫০ হাজার করে সংগঠনটির সদস্যরা। এরপর তৃতীয় দফায় আরো ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। দেড় বছর ধরে কয়েক কোটি টাকা সাংবাদিকদের কাছ থেকে তুলে নিলেও, বিজেসির জমি কেনার কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি,বায়না হয়েছে বলে জানেন না সদস্যরা।

সংগঠনটির নানাভাবে অর্থলোপাট,জমি ক্রয় নিয়ে জালিয়াতি সহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অর্থ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দে জড়িয়েছেন বিজেসির প্রেসিডেন্ট রেজওয়ানুল হক রাজা এবং একাত্তর টিভির বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ।সম্প্রতি বিজেসির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলন বাবদ প্রতি সদস্যের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ১৫০০ করে টাকা। অথচ, অনুষ্ঠানে যে খাবার দেয়া হয়েছে, এবং যে গিফট দেয়া হয়েছে সেসবের নিম্নমান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেসির সদস্যরা। জমির মত সম্মেলনের টাকা নিয়েও নয়ছয়ের অভিযোগ বিজেসির বিরুদ্ধে। গোটা ঘটনা নিয়ে গভীর অনুসন্ধানে নেমেছে করাপশন ইন মিডিয়া।

প্রাথমিকভাবে করাপশন ইন মিডিয়ার ইনভেস্টিগেটরা যা জানতে পেরেছে তার সারমর্ম: ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার বা বিজেসি এর সদস্য ১৮০০ জন। প্রত্যেকে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছে জমি কেনার জন্য। সেই টাকা দিয়ে বিজেসির ট্রাস্টিরা ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে। নিচু জমি অত্যন্ত বেশি দাম দেখিয়ে কেনা হয়েছে পূরবাচল থেকে বহু দুরে জিন্দা পার্কের কাছে,কেনা হয়েছে নাকি বায়না করা হয়েছে,সেটিও পরিষ্কার নন সদস্যরা।আর এই জমি কেনার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে গন্ডগোল চলছে শাকিল বনাম রাজার মধ্যে। রাজা ঐ জমির কমিশনের টাকায় বেনামে জমি কিনেছে ১৮ শতক। এসব প্রশ্ন এড়িয়ে চলতে রাজা এবার বিজেসির সম্মেলনে যোগ দেন নাই।

সদস্যদের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে তাই বাংলা একাডেমিতে বিজেসির সম্মেলনে অনুপস্থিত ছিলেন। গত ২ রা জুলাই বিজেসির সম্মেলন ছিল। এটি রাজা ও শাকিলের একটি পাতানো খেলা। যাতে একজনের অনুপস্থিতে জমির টাকা পয়সার হিসাব না দিতে হয়। শাকিল-রাজা গং অতি চালাকও ধুর্ত । রাজা এবং তার ভাই বোরহান উল হক সম্রাট ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি হওয়ায় ঢাকায় তাদের নেটওয়ার্ক খুব শক্ত। রাজা টেলিভিশন সাংবাদিকদের ফোরামের সভাপতি। সে তার ভাই সম্রাটের নামে জমি কিনেছে পূর্বাচলের পাশে কালীগঞ্জে ও রূপগঞ্জে। আর রুপা ও শাকিল আহমেদের জমির সন্ধান মিলেছে কালীগঞ্জে ও কাঞ্চনে।

বিজেসির সদস্যদের নামে জমি কিনতে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে জমি কিনে ফেলেছেন, রাজা এবং শাকিল! ইতিমধ্যে জমি কেনা নিয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন বিজেসির কয়েকজন সাংবাদিক। কয়েকজন আবার টাকা ফেরত নিয়েছেন,কেউ কেউ ফেরত নেয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। সাংবাদিকরা কখনো এই জমি পাবেন কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গোটা কার্যক্রমে বিজেসির ট্রাস্টি সহ নীতিনির্ধারকদের চরম অস্বচ্ছতা উঠে এসেছে গত এক বছরে। এমনাবস্থাও সবাই টাকা ফেরত পাবেন কিনা,সেটা সময়ই বলে দিবে।…চলবে……